রাজধানীর পল্লবীতে যুবদল নেতা গোলাম কিবরিয়া হত্যার নেপথ্যে চাঁদাবাজি ও মাদক কারবারির বিরোধিতা রয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব। এ ছাড়া এ হত্যার ঘটনায় আন্ডারওয়ার্ল্ড জড়িত বলেও ধারণা করছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাটি।
কিবরিয়া হত্যার ঘটনায় আরও দুজনকে গ্রেপ্তারের পর আজ বুধবার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৪-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মাহবুব আলম।
এর আগে, গতকাল সোমবার রাতে সাভারের বিরুলিয়া ও টঙ্গী পশ্চিম থানার মাজার বস্তি এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী এজাহারভুক্ত আসামি মো. মনির হোসেন ওরফে সোহেল ওরফে পাতা সোহেল (৩০) ও মো. সুজন ওরফে বুকপোড়া সুজনকে (৩৫) গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে, ঘটনার দিন মো. জনি ভূঁইয়া নামের একজনকে আটক করে স্থানীয়রা পুলিশে দেয়। তিনি এজাহারনামীয় আসামি, তাঁকেও এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
র্যাব জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে মিরপুরকেন্দ্রিক ‘ফোর স্টার’ নামের যে গ্রুপ গড়ে উঠেছে সেই গ্রুপের ফোর স্টার হলেন সন্ত্রাসী মামুন, ইব্রাহীম, সাহাদাত ও মোক্তার। তাঁদের ছত্রচ্ছায়ায় ও নির্দেশে মিরপুরের বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন সময়ে অরাজকতা বা সন্ত্রাসী কার্যক্রমগুলো করা হয়। গ্রেপ্তার দুজন ‘ফোর স্টার’-এর সক্রিয় সদস্য।
মো. মাহবুব আলম বলেন, গত ১৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় পল্লবী থানার বিক্রমপুর স্যানিটারি ও হার্ডওয়্যার নামের দোকানে ছয়জন অজ্ঞাতপরিচয় সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে পিস্তল দিয়ে বুকে ও পিঠে অতর্কিত গুলি চালিয়ে গোলাম কিবরিয়াকে হত্যা করে। এরপর ওই স্থান থেকে পালানোর সময় স্থানীয় জনতার ওপর অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা গুলি করে। এতে এক রিকশাচালক গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর জখম হন। পরবর্তী সময়ে ছাত্র-জনতা ধাওয়া করে জনি ভূইয়া নামের এক সন্ত্রাসীকে আটক করে পল্লবী থানা-পুলিশে সোপর্দ করে।
ঘটনার পরপরই র্যাব-৪-এর এক আভিযানিক দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং আনুষঙ্গিক তথ্যাদি বিশ্লেষণ করে। এরপর ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন এবং জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনতে ছায়া তদন্ত শুরু করে র্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় ১৮ নভেম্বর রাতে হত্যাকাণ্ডের নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী মো. মনির হোসেন ওরফে সোহেল ওরফে পাতা সোহেল এবং ১৮ মামলার শীর্ষ ও পলাতক সন্ত্রাসী মো. সুজন ওরফে বুকপোড়া সুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘রাজনৈতিক কোন্দল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ডটি হয়েছে। এটি একটি সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, যাতে বড় অঙ্কের অর্থের লেনদেন হয়। আসামিরা পেশাদার হত্যাকারী এবং তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। পাতা সোহেলের নামে একাধিক হত্যা, ডাকাতি, মাদকসহ পল্লবী থানায় মোট আটটি মামলা রয়েছে।’
গ্রেপ্তার দুজন মিরপুরকেন্দ্রিক গড়ে ওঠা ‘ফোর স্টার’ গ্রুপের সক্রিয় সদস্য। ফোর স্টার গ্রুপ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইব্রাহিম ও মামুন নিয়ন্ত্রিত যেসব এলাকা রয়েছে, সেসব এলাকায় এই ফোর স্টার গ্রুপের সদস্যরা সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত ছিলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব আলম বলেন, সোহেল ওরফে পাতা সোহেল অর্থ সরবরাহ করেছিলেন। তবে তিনি কীভাবে অর্থ পেয়েছেন কিংবা কার কাছ থেকে পেয়েছেন, সেটা এখনো পরিষ্কার নয়।
হত্যাকাণ্ডের মোটিভ সম্পর্কে প্রশ্নে র্যাব-৪-এর অধিনায়ক বলেন, প্রথমত, মিরপুর এলাকাকেন্দ্রিক আধিপত্য বিস্তার, চাঁদাবাজি, মাদক ও অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যকলাপ। দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক কোন্দল। গোলাম কিবরিয়া একটি রাজনৈতিক দলের সদস্যসচিব এবং মিরপুর এলাকায় রাজনৈতিকভাবে তিনি খুব সক্রিয় ছিলেন। এর আগে গোলাম কিবরিয়ার যাদের সঙ্গে সখ্য ছিল, রাজনৈতিক মেরুকরণের পর তাদের বিরুদ্ধে তিনি কাজ করছিলেন। বিশেষ করে এলাকায় চাঁদাবাজি ও মাদক কারবারে গোলাম কিবরিয়ার সাপোর্ট ছিল না। হয়তো এ কারণে হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে।
হত্যাকাণ্ডে মামুনের সম্পৃক্ততা আছে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামুনের সরাসরি সম্পৃক্ততা আছে কি না, সে বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। হত্যাকাণ্ডে আন্ডারওয়ার্ল্ডের কানেকশন থাকতে পারে, সবাইকে গ্রেপ্তার করলে রহস্য উন্মোচিত হবে।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কিবরিয়ার স্ত্রী সাবিহা আক্তার দিনা বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। মামলার নামীয় আসামিরা হলেন মো. জনি ভূইয়া, সোহেল ওরফে পাতা সোহেল ওরফে মনির হোসেন, সোহাগ ওরফে কাল্লু, মাসুম ওরফে ভাগিনা মাসুম ও রোকন। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা সাত-আটজনকে আসামি করা হয়েছে।